ডেস্ক রিপোর্ট: ছেলেকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিতে অস্বীকার করা দিনাজপুরের মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের চাকরিচ্যুত ছেলে জেলা প্রশাসকের দেওয়া চাকরি নেবেন না বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।
বিষয়টি তারা সাংবাদিককে বললেও এখনো জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চাকরি নিতে অনীহার বিষয়টি অবহিত করেননি। তারা বলছেন, চাকরি নিতে অনীহার বিষয়টি তারা জেলা প্রশাসককে জানাবেন।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১টায় মারা গেলে পরদিন বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ইসমাইল হোসেনকে তার ইচ্ছে মতো রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করা হয়।
এর একদিন পরই জেলা প্রশাসকের দেয়া চাকরির প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন অভিমানী সেই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে গেলে তার সন্তান নূর হোসেন বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগের দিন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে বাবাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সেই ঘটনার পর বাবা অসুস্থ হয়ে যান এবং পরবর্তী সময়ে মারা যান। জেলা প্রশাসক আমার ভাই নূর ইসলামকে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে আমরা সেই চাকরি নেবো না।
একই কথা জানান আরেক ছেলে নূরুজ্জামান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সম্মানটুকু না নিয়ে আমার বাবা বিদায় নিয়েছেন। এই চাকরি আমরা কেন নেবো? জেলা প্রশাসক এসেছিলেন; তাকে সম্মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উনার দেওয়া চাকরি তো আমরা নিতে পারি না। কারণ, দুই মাস পর যে আবার চাকরি থেকে বের করে দেবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা আছে? আমরা সরকারের প্রতিনিধি হুইপ ইকবালুর রহিমের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
চাকরি প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে শনিবার সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বড় ছেলে নুরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি এখনো ডিসিকে জানানো হয়নি। তবে তারা অনীহার বিষয়টি জানাবেন।
এদিকে, দেশব্যাপী সমালোচনার মধ্যে শনিবার রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন তার স্ত্রীসহ প্রয়াত এই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। শনিবার দুপুরে দিনাজপুরের সদর উপজেলার যোগিবাড়ী গ্রামের বাড়িতে যান জাকির হোসেন। এসময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী, বড় ছেলে, চাকুরিচ্যুত ছেলে নুর ইসলামের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের মৌখিক অভিযোগ শোনেন।
পরে পরিবারের কাছে লিখিত অভিযোগ চেয়ে বলেন অভিযোগ পেলে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। এ ঘটনায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর সদর উপজেলার যোগিবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন তার গাড়িচালক ছেলেকে চাকরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত করাসহ মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে একটি চিঠি লেখেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে। হাসপাতাল থেকে লেখা ওই চিঠিতে তিনি মৃত্যুর পর প্রশাসনের গার্ড অব অনার নিতে অনীহার কথা বলেন। তারপর বুধবার রাতে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। পরিবারের আপত্তির কারণে বৃহস্পতিবার তাকে গার্ড অব অনার ছাড়াই দাফন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ছেলে নুর ইসলাম দিনাজপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক ছিলেন।
নুর ইসলামের ভাষ্য, সহকারী কমিশনারের স্ত্রীর কথামতো রান্না করার পর তা ভালো না হওয়ার অজুহাতে তাকের চাকরিচ্যুত করা হয় এবং তাকে দেওয়া সরকারি বাড়িটিও কেড়ে নেওয়া হয়।